পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাক

“ইনান ! তুই আমাকে খোঁচাচ্ছিস কেন ?” অমিত আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল ।
আমি ওর চেয়েও আরেক ধাপ নিচু গলায় ফিসফিস করলাম, “ওহে গর্দভ ! আমি খোঁচাচ্ছি না । তোর গায়ে গাছের ডালের খোঁচা লেগেছে ।”
“ ও ! হে হে !”
“হাসি বন্ধ কর ! পাহারাদার শুনে ফেললে তোর হাসি বের করে দেবে !”

সাথে সাথে অমিত হাসি থামিয়ে দিল । ভাল ছেলে । আমার সব কথা শোনে !

“কিন্তু ইনান, আমরা যে এই বাগানের আম চুরি করবো, তাহলে বাগানের মালিককে ক্ষতিপূরণ দেবে কে !”

লিটল এন্জেল এবং একজন বাবার গল্প.......

"বাবা!তুমি বাচ্চাদের মতো বাইরে বসে আছো কেন?তোমার তো ঠান্ডা লেগে যাবে?তুমি কি ভুলে গেছো তোমার একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়?কতবার যে তোমাকে এই কথাটা মনে করিয়ে দিতে হবে!তাড়াতাড়ি ভেতরে এসো..."

রাতেই বাংলাদেশে এসেছেন রাইয়ান সাহেব তাঁর মেয়েকে নিয়ে।এখন লঞ্চে করে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে।কতদিন পর বাংলাদেশে আসলেন তিনি?মনে করার চেষ্টা করেন।প্রায় ২৩ বছর পর।অন্তি অজানার দেশে চলে যাওয়ার পরই তিনি আশালতাকে নিয়ে পাড়ি দেন অস্ট্রেলিয়ায়।আশালতার বয়স তখন মাত্র ১ বছর।ঠিকমতো কথাও বলতে পারেনা।তারপরো হামাগুড়ি দিয়ে এ ঘর থেকে ও ঘরে শুধু অন্তিকে খুজে বেড়াতো।এই দৃশ্য রাইয়ান সাহেবের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব ছিলোনা।অবুঝ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া কি বা করার ছিলো তাঁর?দেশেও তেমন কেউ ছিলনা তাঁর।নিজের বাবা মা কে অনেক আগেই হারিয়েছেন।আত্মীয় স্বজনও খুব বেশী ছিলনা।

অবেলার কান্না

যতটুকু বয়সে একজন শিশু কিছুটা গুছিয়ে কথা  বলতে শেখে , যখন তখন যার  তার কোলে উঠে পড়ার অধিকার হারায় কিংবা যে বয়সে তারা বড় হওয়ার সুখ স্বপ্ন দেখতে  শুরু করে , আমি তখন ততটুকুই  । চার কি পাঁচ বছরের মতো বয়স । তখনকার জীবনের ভাঙা ভাঙা কিছু ছবি এখনও আমার চোখে ভাসে । তখন আমরা থাকতাম আমাদের মোহাম্মদপুরের বাসাটায় ।  আমার শরীরে তখন একটি একটি করে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে বড় হয়ে,বড় মানুষ হওয়ার বীজ , “অ”, “আ”, “ক”, “খ”।

স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হব । রাস্তায় শুধু লাল সবুজ নয় , কমলা ,বেগুনী আকাশী বাতিও জ্বলবে ।  ত্রিভুবনে আমার শত্রু বলতে একজনই ছিল, চাচাতো বোন মালিহা ।

একবিন্দু জল

ঠিক ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে অনিন্দিতা পাখির ডাক শুনতে পায়,নাহ প্রিয়াঙ্কা বেশ ভালো করেই পাখির ডাক রপ্ত করেছে । ব্যাগটা গুছিয়ে খুব চুপিসারে বের হয়ে আসে ও। বের হয়েই যুথিকে দেখে জড়িয়ে ধরে অনি,চার বান্ধবী জাপটা জাপটি করে ধরে রওনা হয়. . ."

এতটুকু পড়েই ঐশী বলে,মা তোমার বান্ধবীর লেখাটা সম্পূর্ণ তোমার মত তাইনা? নামটাও বেশ মিলে যায় ।

"হুম আমার খুবই কাছের বান্ধবী ছিল অনিন্দিতা" শোকেসে রাখা পুতুলগুলো মুছতে মুছতে অনিতা বলে ।

- লেখা দেখেই বুঝতে পারছি। তবে মা তোমার বান্ধবী কিন্তু দারুণ লিখে কথাটা বলেই ঐশী আবার ডায়রিটা পড়তে শুরু করে দেয়।

শঙ্খচূড়-


(উপন্যাসটা শুরুর আগেই বলে নিচ্ছি এটার একটা ভূমিকা আছে। মোটামুটি একটা চ্যাপ্টার তুল্য ভূমিকা। যদিও এটাকে আমি চ্যাপ্টারের শ্রেণীতে ফেলতে রাজি নই।)

পূর্বকথাঃ 
আজ হাজী বাড়ির ভেতরে বাহিরে উপচে পড়া ভিড়। বহুকাল এত মানুষের সমাগম হয়নি মাঝারি সীমানার এ বাড়িতে। কুয়া পাড়েও জনা ছয়েক মানুষ পাঞ্জাবী পাজামা পরে এদিক ওদিক বিমর্ষ মুখে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে, দেখে বোঝা যাচ্ছে কোথাও বসার জন্য চেয়ার খুঁজছে- কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এখানে থাকবে নাকি বাহিরে বেরিয়ে কোথাও থেকে দুকাপ চা, সাথে বিড়ি সিগারেট টেনে আসবে। কারণ এ বাড়িতে আজ খাওয়া দাওয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্তত চুলা ধরবে না একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগ পর্যন্ত।
উঠানের কিশোর বয়সী ঝুলে পড়া আম গাছটার চারপাশে প্লাস্টিকের চেয়ার এদিক সেদিক বিছিয়ে রাখা। একটাও খালি নেই। গেদা বাচ্চা থেকে শুরু করে থুড়থুড়ে বুড়ো দিয়ে চেয়ার গুলো ভরে গেছে।

যায় রৌদ্র-ছায়া-মেঘ , আসে বসন্ত...

উফ্ একটা মানুষের আসতে এতক্ষণ লাগে ? অপেক্ষা জিনিসটা নিশিতার একদম পছন্দ না , কিন্তু রায়ানের জন্য এমন কোন দিন নেই যে ওর ঘন্টা দুয়েক বা তার চেয়ে বেশি অপেক্ষা করা লাগে নাই ।
রাগ করতে যেয়েও নিশিতার রাগ করতে পারে না , ঐ যে হাঁপাতে হাঁপাতে রায়ান আসছে , হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল বন্ধু কিংবা সবচেয়ে ভাল প্রেমিক কিংবা নিশিতার জীবনের সবচেয়ে দামি যা , সেই রায়ান ।
এতো সময় লাগলো যে ?
স্যরি একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম , পাঞ্জাবীর পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে রায়ানের উত্তর ।
আজকের দিনেও কাজ ?
কি আশ্চর্য ! কাজ করা লাগবে না ?
আজ আমাদের বিয়ে , রায়ান !
তো কি হয়েছে ? বিয়ে হলেই যে কাজ বন্ধ করে দিতে হবে তা তো না !

৭০০ কোটি মানুষ ও একটি আত্নবিসর্জন



আজ নভেম্বরের ১ তারিখ। ভোর ৬ টা বাজে এখন। আমার বয়স ১৪ বছর, নবম শ্রেণীতে পড়ি। আমি ঠিক করেছি আজ সকাল ১১ টায় আত্নহত্যা করব। দিনের শুরুতেই করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাতে পরিচিত মানুষদের দিন শুরু হবে শোকবার্তা দিয়ে। কয়েক ঘণ্টা সময় তাই পেছালাম।

আত্নহত্যার পেছেনে কতগুলো কমন কারণ থাকে-পরীক্ষায় খারাপ করা, জোর করে বিয়ে ঠিক করা, ইভটিজিং বা তারচেও বড় কোন শারিরীক নির্যাতনের শিকার হওয়া অথবা কারও দূর্ব্যবহার। কিন্তু আমার বেলায় কিছুই হয় নি এসবের। আমার ব্যাপার ভিন্ন।